বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬

জবি শিক্ষার্থীদের হলের দাবীর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার মিথ্যাচারের জবাব দিলেন জবি শিক্ষার্থী।

সাংবাদিক জনাব গোলাম মোর্তোজা গত দুইদিন যাবত ফেসবুকে এবং সর্বশেষ বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন নিউজ এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় কারাগারে হলের দাবিতে আন্দোলন এর যৌক্তিকতা নিয়ে অর্থাৎ সরাসরি এর বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন। তার লেখা ও মিথ্যাচারের জবাবে আমার এ লেখা।


১.প্রথমেই আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কে পূর্ণাঙ্গ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সম্বোধন করেছেন। যদি তাই হয় তাহলে অনাবাসিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন মহিলা হল নির্মাণ হচ্ছে! কেন কেরানিগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর নামে অদূরভবিষ্যৎে একটি ছেলেদের হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আর কেনই বা জাতীয় সংসদে পাশকৃত ২০০৫ সালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে "হল" এবং "প্রভোস্ট" নামে দুটি শব্দ এবং এর সজ্ঞা রয়েছে।


২. আজকের পুরান ঢাকাকেই আসল ঢাকা বলে এর বসবাসের অনুপযুক্ত করার জন্য বহিরাগতদেরই দায়ী করেছেন। এই বহিরাগত বলতে কাকে বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।তবে বসবাসের অনুপযুক্তের জন্য যুগ যুগ ধরে বাস করা স্হানীয় বাসিন্দারাই দায়ী। এই যে গিঞ্জি এলাকা,গাছপালা নেই, একটার সাথে একটা লেগে থাকা বাড়ি, চিপা গলি এগুলো কোনটাই নোয়াখালি, বরিশাল বা উত্তরবঙ্গ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে বাসিন্দারা করেনি। যুগ যুগ ধরে এই এলাকাটা স্হানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের মধ্যে দিয়েই আজ এ অবস্হায় দাড়িয়েছে। আরও বলছেন এই কারাগারকে কেরানিগঞ্জ নেয়ার আগে কাশিমপুর নেয়ার পরিকল্পনা ছিল এই এলাকার মানুষের অসহনীয় দূর্ভোগ এর কথা চিন্তা করে। আপনি এই একটা কারনই বলেছেন। না, সরানোর মূল কারন হচ্ছে কারাগারের বাসিন্দাদের এখানে তীব্র জায়গা সংকট এবং অনেক বড় বড় অপরাধের গনহত্যার আসামীদের এই কারাগারে রাখার নিরাপত্তা নিয়ে।

৩.বলেছেন এই জায়গা কারা অধিদপ্তর বা স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় এর। এটি সরানোর সঙ্গে জগন্নাথের হলের কোন পরিকল্পনা ছিল না। হ্যা আমরাও বলছি ছিলনা, কিন্তু তাই বলে কি পরিকল্পনা পরিবর্তন করা বা হলের জায়গা পরিকল্পনার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা এটা কি রাষ্টের কোন আইনে বলা আছে? যদি ইতিহাস টান দেই তবে এ দেশে গণদাবীর পক্ষে ছাত্র সমাজের পক্ষে অনেক পরিকল্পনা পরিবর্তন করার নজির পাওয়া যাবে।

৪.এই জায়গায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হিসেবে জাদুঘর, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেষ্টুরেন্ট, ছোট দোকান,বিনোদনের ব্যবস্হা হিসেবে পার্ক এবং হাটা- চলার জন্য খোলা জায়গার কথা আছে বলে উল্লেখ্য করেছেন। এটা আপনি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যাচার করেছেন। এই জায়গায় জাদুঘর, কারা কল্যাণ ভবন ও সবুজ উদ্দ্যানের পাশাপাশি সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম, বহুতল পার্কিং, শপিংমল, সিনেমা হল এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হবে একটি কমিউনিটি সেন্টার সূত্র- ভোরের কাগজ। এবং আপনার জ্ঞাতার্থে বলে রাখছি এই পরিকল্পনাও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। স্হাপনা গুলো নির্মাণের শুধু প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
অনেক আগে থেকেই আমাদের বলা এই জায়গা পেলে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি সংরক্ষনে জাদুঘর করব এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বরেন্দ্র জাদুঘর এর মত এই জাদুঘরও আমাদের অধীনে থাকবে। এবং হলগুলো বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নামেই হবে। আর পার্ক বা হাটা চলার জন্য খোলা জায়গা নিকটবর্তী ওসমানী উদ্দ্যানই তো আছে। এটা তো আর লালবাগ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে নয়। নয় কি? ওসমানী উদ্দ্যানে যে সকাল বিকাল নেশাখোরদের গাজার কারখানা আর ছিনতাইকারীদের অভয়াশ্রম চলছে তা দূর করে একে সুন্দর ও নিরাপদ হাটা চলার জায়গা করার দায়িত্ব সরকারেরই।আর আমরা সাভারের নবীনগর, টঙ্গী, কাঁচপুর থেকে সদরঘাটে ক্লাস করতে আসতে পারলে আপনারা বাসা থেকে উদ্দ্যানের এই খানিক দূরত্বে যেতে পারবেন না? নাকি আরামার্থে পার্ক বা খোলা জায়গা আপনাদের বাসার ভেতরেই তৈরি করে দিতে হবে!


৫.এখানকার ভবনগুলোতেই কারা অধিদফতর এর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, অফিস থাকবে। লালবাগ থানা এবং পুরনো কিছু ঐতিহ্যবাহী ভবনও থাকবে বলে উল্লেখ্য করেছেন। যে স্হানে কারাগার শিফট হয়েছে সেখানে যদি ট্রেনিং ইনস্টিউটও শিফট হয় তবে কি তাদের সুবিধা হবে না অসুবিধা হবে! লালবাগ থানা এখানে আনার যে পরিকল্পনার কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য এবং মিথ্যাচার। আর জাদুঘরের কথা আমরা আগেই বলেছি। কারাগারের ঐতিহ্যবাহী ভবন গুলোতেই জাদুঘর করে ঐতিহ্য ও স্মৃতি ধরে রাখা হবে।

৬.হল সম্পর্কে যে ইতিহাস বলেছেন তা সঠিক।কিন্তু ১৯৮৫ সালে হলগুলো দখলের সময় ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ ছাড়াও তৎকালীন এরশাদ সরকারের ছাত্রসংগঠন "জাতীয় ছাত্রসমাজ" এবং পুরান ঢাকার স্হানীয় বাসিন্দাদের দায়ও ছিল। হলগুলো কিন্তু আগুন দিয়ে তারাই জ্বালিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে হলগুলো দু একবার উদ্দার করার চেষ্টাও করা হয়েছিল। তবে উদ্ধার না করতে পারার অন্যতম কারন তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময়ে সরকারের মদদেই তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের অধক্ষ্য এবং প্রশাসন এর সহায়তায় হলগুলোর অনেক কাগজ-দলিলের কিছু পুরিয়ে ফেলা, কিছু গায়েব করে ফেলা এবং দখলদারদের গোপনে দিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবং পরে আবার বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের ছাত্রদলের একজন নেতার রাজনৈতিক ক্ষমতায় হল বিক্রি করে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছিল। হ্যা দখলদারদের অনেকে ভারত পর্যন্ত গিয়ে বংশধরদের থেকে কিছু হলের কাগজপত্র জোগাড় করেছে, অনেকে জালও করেছে। ফলে আদালতের রায়ও দখলদারদের পক্ষে গেছে।
আপনি স্টাটাসে বলেছিলেন কারাগারের জায়গার দাবিতে আন্দোলন বাদ দিয়ে যে হলগুলো দখলে আছে সেগুলো উদ্ধারে আন্দোলন করা উচিত। জি ঠিক এই আন্দোলনটাই ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত হয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা অনেক হামলা, মামলা, শোকজ এর শিকার ছাড়াও পুলিশের গুলি খেয়েছে রক্ত পর্যন্ত ঝরিয়েছে।প্রত্যেকবারই আন্দোলন শেষে ভূমি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, পুলিশ, রাজউক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হল উদ্ধার কমিটি করা হয়। কিন্তু দিনশেষে হল আর পাওয়া হয় না। সর্বশেষ ২০১৪ এর হল আন্দোলনের সময়ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নির্দেশে এরকম একটি হল উদ্ধার কমিটি করা হয়। কিন্তু সে কমিটির প্রধান স্হানীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ স্বার্থান্বিত হয়ে ঢাকা জেলার ডিসি বরাবর চিঠি দিয়েছিল যেন বিশ্ববিদ্যালয়কে হল না দিয়ে দখলদারকেই তা বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখন ন্যাড়া যদি বেলতলায় একবারই যায় তাহলে কি আমাদের সেই দখলকৃত হল উদ্ধার বা এর পরিপ্রেক্ষিতে আবার কোন উদ্ধার কমিটি,তাদের দায়সারা সুপারিশ, প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্রের উপর বিশ্বাস ও আস্হাবোধ রাখা উচিত! এবং রেখে কারাগারের জায়গার দাবি বাদ দিয়ে সেই হলগুলো উদ্ধারের আন্দোলন করে আর দিনশেষে আশ্বাস নিয়েই সারাটি জীবন পার করে দেয়া উচিত!
তবে" সরকার, সরকারি দল, সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন- এসব বাড়ি উদ্ধারে কখনোই আন্তরিক ছিল না। বাম ছাত্র সংগঠন এবং সাধারন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে তারা কখনো আন্তরিকভাবে সমর্থন করেনি " এই কথাটিতে যা বলেছেন এখন পর্যন্ত তাই হয়ে এসেছে।


৭.কারাগারের এক তৃতীয়াংশ জায়গা নিয়ে কারা অধিদফতর এর ট্রেনিং ইনস্টিউট ও অফিস করার পক্ষে আপনি নন।বলেছেন এটা নতুন কারাগারের কাছে করা যেতে পারে। এবং শেষে মতামতে বলেছেন এই জায়গায় শিক্ষার্থীদের দু তিনটি হল ভাবা যেতে পারে কিন্তু এখানে তা না করে পুরো এলাকা খোলা চত্তর হিসেবে রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। খালি জায়গায় যদি হল করার চেয়ে খোলা চত্তর রাখা আপনার কাছে বেশি প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়ে থাকে তবে আমাদের আর কিছু বলার নেই। এক্ষেত্রে আপনার অত্যন্ত সুচিন্তিত মতামত জাতির উপকারে লাগবে আশা করি।

৮.হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করার অধিকার, প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দেওয়ার গনতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে বলেছেন। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জল কামান ব্যবহার, পুলিশ দিয়ে পেটানোর নিন্দা জানিয়েছেন।পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে আন্দোলন দমন করা যে অন্যায়, অনৈতিক সেটাও বলেছেন।এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে পূর্বাচলে ৫০ একর জায়গার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের আবেদনকে সরকারের দ্রুত ভাবা উচিত বলে যে মত দিয়েছেন তার সাথে একমত নাই। কারন কোথায়....... পূর্বাচল আর কোথায়......... সদরঘাট। একটি ঢাকার একমাথায় তো অন্যটি ঢাকার আরেকমাথায়।বাসে করে গেলে প্রতিদিন ভার্সিটি যাওয়ার পথে ২ ঘন্টা আসার পথে ২ ঘন্টা করে মোট ৪ ঘন্টা লাগবে। একমাত্র হাফ টিকিটে বাংলাদেশ বিমানের সদরঘাট টু পূর্বাচল ফ্লাইট চালু করলেই এখানে হল নির্মাণ সম্ভব।

৯. আপনার ছবি বিকৃতি, গালাগাল বা আইডি অচলের মত যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। দেখুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় ২০০০০ এর অধিক।এর মধ্যে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর এরকম দু একটা কর্মকান্ড অস্বাভাবিক ভেবে নেওয়ার কোন কারন নেই।কারন একে তো হলবিহীন মেস লাইফে জীবনযাপন তার উপর সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার ঘটনায় ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্বে, হয়রানিতে, ভাড়া বৃদ্ধিতে, বাড়ি ছাড়ার নোটিশে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার দিশেহারা। এই অবস্হায় কেন্দ্রীয় কারাগারের একচিলটে খালি জায়গা এদেরকে নতুন করে হল পেতে মাথা গোজার ঠাই পেতে আশা জাগিয়েছে স্বপ্ন দেখিয়েছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে নেমে একদিকে ভিসি প্রশাসনের বাধা, তাদের শিবির জঙ্গির ট্যাগ লাগানোর হুমকি, রাজপথে পুলিশের টিয়ারশেল আর গুলি সবখানেই একপ্রকার নির্যাতন আর নির্যাতন। ঠিক সে অবস্হায় যখন দেশের শিক্ষকদের, সাংবাদিকদের, সুশিল সমাজের সমর্থন না পেয়ে বরং উপহাস পায় বিরোধী অবস্হান পায় তখন এরা অনেকেই নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ভেতরের সব রাগ ক্ষোভ রাষ্টের প্রতি সমাজের প্রতি উগড়ে দেয়। এটাই তো হওয়ার কথা। এদের বাইরের রাগ ক্রোধটা হয়ত সবাই দেখছে কিন্তু ভেতরের অবস্হাটা কেউ বোঝার চেষ্টা করেনি বা করছে না।

আর সর্বশেষ বলেছেন কারাগারের জায়গায় কয়েকটি হল হলে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর উপকার হবে আর খোলা জায়গায় যা করতে চাওয়া হচ্ছে, তা করলে এক-দেড় কোটি মানুষের উপকার হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ২০০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী সহ সামনের দিনগুলোতে প্রত্যেক বছর যে ৩০০০ করে ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়ে এখানে লেখাপড়া করতে আসবে তারা যদি আপনার কাছে শুধু "কয়েক হাজার শিক্ষার্থী" হয়ে থাকে আর কারাগারের আশেপাশের স্হানীয় বাসিন্দা, কিছু ব্যবসায়ী আর হাজী সেলিম এর কিছু ভাড়াটে ক্যাডার-দালাল আপনার কাছে এক-দেড় কোটি মানুষ হয়ে থাকে তাহলে আর আমাদের বলার কিছু নেই।

তবে আপনার কথা ধরে নিয়েই বলি এই "কয়েক হাজার শিক্ষার্থী" থেকেই কিন্তু তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ভারতের পদ্মভূষণ পদক পাওয়া অ্যামিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ,মিরপুর স্টেডিয়ামে যার স্মরণে ক্রিকেট স্টান্ড রয়েছে সেই ক্রাক প্লাটুন এর সদস্য শহিদ বীর বিক্রম জুয়েল আর ৫২র ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ রফিক। "কয়েক হাজার শিক্ষার্থী" র ছোট ক্যাম্পাস জগন্নাথেই একদিন এরা পদচারণা করে সারা বাংলার বুকে স্হান করে নিয়েছে।
#হল চাই


লেখক :আতিকুর রহমান বিপ্লব, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জবি।

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

একজন গুণী মানুষ ও তাঁর ভক্তের কাছে আসার গল্প :-

একজন গুণী মানুষ ও তাঁর  ভক্তের কাছে আসার গল্প :-



২০১৪ সালের শেষের দিকের ঘটনা তখন প্রথম বর্ষের ২য় সেমিস্টারে পড়ি।
পরিচয়ের সূত্রটা এ সময়েই,,তারপরেই তো আসল ঘটনার শুরু। শুধু  ফটোগ্রাফার হিসাবে যাকে চিনতাম, পরিচয়ের পরে ধারণাটা পুরাই পাল্টে যাই ।

যার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে সাধারণ ফ্যান থেকে Die Hard Fan এ রুপান্তরিত হতে
বাধ্য হতে হয়।




কিছুদিন পিছনে ফেরা যাক, ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরে, ফেসবুকে  জবির নামে বিভিন্ন পেইজে  ও ক্যাম্পাসের বড় ভাইয়া/আপুরা  বি.এম.সাবাব ভাইয়ের তোলা ছবি আপলোড দিতেন।তখনও উনার সাথে আমার পরিচয় হয় নি।
প্রথম যেদিন যদি তাঁর ছবি দেখি তখনই তাঁর ছবির প্রেমে পড়ে যাই। বিশেষ করে তাঁর HDR (High Dynamic Range) ছবিগুলো বেশী আকর্ষণীয় মনে হত।


এবার আসি মূল ঘটনায় ২০১৪ সালের শেষের দিকে  কোন এক সন্ধ্যায় ভাইয়ের ফেসবুক আইডিটা সামনে আসে। প্রথম প্রথম কয়েকদিন আইডিতে ঘুরি আর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করি। ভাইয়ের সেলফি আর ক্যাম্পাসের ছোট ভাই /বোনদের নিয়ে পোস্টগুলি দেখে কেমন একটা পাগলাটে স্বভাবের  মনে হত।


প্রথম কয়েকদিন এরকম ভাবে কেটে গেল। মাঝেমধ্যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিতে যেয়েও দিই নি, ভেবেছি এসেপ্ট করবেন না। পরে একদিন সাহস করে দিলাম রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে। সাথে একটু বুদ্ধি করে ইনবক্স করলাম ফ্যান হিসাবে।
কয়েকঘন্টার  মধ্যে এসেপ্ট করলেন। ধন্যবাদ দিলাম। আস্তে আস্তে আলাপচারিতা শুরু। ভাবতাম উনি রিপ্লাই দিবেন না, কিন্তু ধারণা পাল্টে গেল, প্রতিটি মেসেজের রিপ্লাই আসতো। যা অকল্পনীয়।


কয়েকমাস আমাদের এরকম চ্যাটে কথা হয়, কিন্তু একই ক্যাম্পাসের হলেও দেখা হয় না। একদিন হঠাৎ করে শান্ত চত্বরে ভাইকে দেখলাম বসা, এহিয়ে যেয়ে সাহস করে নিজের নামটা বলে দিলাম। কয়েকমাসের পর দেখা হওয়ায় বেশ ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু নিজেকে কনট্রোল করি তখন। এখানে বলে রাখা ভাল, ভার্সুয়ালি আমাদের কনটাক্ট হলেও
আমি তখন ভাইকে অনেক কাছের ভাবতে শুরু করি।


যাই হোক আমার গল্পের শুরু এভাবে। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে আমরা একসাথে কাটিয়েছি ঘন্টার পর ঘন্টা, মাসের পর মাস।
ভাই বিশাল পরিমাণে এক্সট্রোভার্ট। তাই বেশ ভালই লাগে মিশতে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বেশ আনন্দঘন করে তোলে তাঁর ফ্যানদের দিনটাকে।


আস্তে আস্তে ভাইয়ের সাথে কাটিয়েছি প্রায় দুটো বছর। এই সময়ের মধ্যে কাছ থেকে যেটা দেখেছি সেটা আমার কল্পনাকেও হার মানায়।তাঁর ব্যক্তিত্ব সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয় তাঁর তৈরী  ছবির মতই।
তিনি যে শুধু ছবি তৈরী করেন তা নয়, তিনি লেখেনও ভাল । তিনি একজন ভাল সংগঠকও বটে।


তাঁর ছবির জন্য অসংখ্য পুরষ্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন ওয়াল্ড ফেমাস ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে  আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর তোলা ছবি পৌঁছে গেছে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কাছে।



তাঁর এসব গুণাবলী আমাকে বেশী মুগ্ধ করে।আমার ফেসবুকে সবথেকে বেশী চ্যাট হয়েছে বি.এম.সাবাব ভাইয়ের সাথেই। আমি তাঁর সম্পর্কে মোটামুটি জানি।তাঁর স্নেহ সুলভ আচরণ তাঁর প্রতি ভক্তিকে আরও তীব্রতর করেছে।


আপনার ভালবাসায় সিক্ত এই ছোট ভাইয়ের ভুলত্রুটিগুলো সব সময় ধরিয়ে দিবেন দাদা। আজ আপনার জন্মদিনে আমার এই  ছোট করে লেখা গল্পটিতে ভুল কিছু বলে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ। আপনার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি, একদিন গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব জয় করবেন তেমনটি আশা করি।

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

গরীবের রক্তচোষা সাংসদবৃন্দ ও মূর্খের শাসনব্যবস্থা :-

গরীবের রক্তচোষা সাংসদবৃন্দ ও মূর্খের শাসনব্যবস্থা :-

সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন সাংসদরা প্লট ও ফ্ল্যাট দুটোই পাবেন। উনাকে আসলে একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে এই ঘোষণা দিতে।এটা হয়ত ভিতরের খবর, কিন্তু প্রকাশ্যে যে সত্য প্রকাশ হয়েছে সেটা দেখে সাংসদদেরকে জাতীয় ফকির বলে মনে হয়েছে।


গত সোমবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী সহজ শর্তে সাংসদদের ফ্ল্যাট নেওয়ার প্রস্তাব করেন। মন্ত্রীর ভাষ্যমতে রাজউকের অধীনে প্রায় এক লাখ এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করা হবে। সহজ শর্তে তিনি সাংসদদের এই সুযোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেন,যারা গরিবের বা খাস জমি চেয়েছিলেন তাদের প্রতি।


সবথেকে লজ্জার ব্যাপার, সাংসদেরা মন্ত্রীর প্রস্তাব নাকোচ করে দেন ,নো নো বলে, তাদের নাকি প্লট চাই।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাংসদদের কেন প্লট বা ফ্ল্যাট দিতে হবে?দেশের জমি কি সাংসদদের পৈতৃক সম্পত্তি? 

তাদের রাজউকের অধীনে তৈরী ফ্ল্যাট বা প্লট দিতে হবে কেন? তাদের থাকার কথা তো নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়।সংসদ অধিবেশনের সময় তাদের থাকার জন্য এমপি হোস্টেল রয়েছেই। 

তাদের এই এমপি হোস্টেলকে না হয় দেশের নামী দামী পাঁচ তারকা হোটেলের থেকেও মডারেট করা হোক, কিন্তু দেশের হাজার হাজার গরীব মানুষ যেখানে বস্তিতে বাস করে, সেখানে দেশের খাস জমির দিকে লোলুপ দৃষ্টি দেওয়া কি কোন বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে?দেশকে যদি সত্যিই ভালবাসেন, দেশের মানুষকে যদি সত্যিই ভালবাসেন তাহলে সাধারণ জনগণের রক্ত চুষতে পারেন না।


মূর্খের শাসন ব্যবস্থায় মানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নতির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় এরকম রক্তচোষা, স্বার্থলোভী জনপ্রতিনিধিরা।আমাদের দেশের সাংসদরা ভোট শেষ হওয়ার পর ডুমুরের ফুল হয়ে যায়, আর জনগণও সেটাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না, তাদের যেন এক প্রকার সহ্য হয়ে গেছে। জনগণের মধ্যে আবার চাটুকারিতা মনোভবের অতি আধিক্যতা লক্ষ্য করা যায়। এরকম ধরনের পাবলিক কমনিকেশনে দেশের উন্নতি সুস্থ ধারায় কখনও সম্ভব নয়।


আর হ্যাঁ, মুজীব কোট পরা সাংসদবৃদ্ধ,মনে রাখবেন গায়ে মুজীব কোট জড়ালেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে, চিন্তা ধারা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করা হয় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করুন।সেটা পারলে গরীবের রক্তচোষার কথা ভাবতেও লজ্জা পাবেন।


সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হতে মুজীব কোট পরা লাগবে না, চেতনাকে বুকে ধারণ করলেই হবে। মুজীব কোর্ট পরার যোগ্যতা অর্জন করে তবেই পরা সমীচীন বলে মনে করি ।

লেখক:-
এস.এম.নাসির উদ্দীন,
শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক এতিমের গল্প:-
---------------------------------------------------------